Description
১৯৮১ সালের ৩০ মে। ফজরের নামাজ পড়ে ঘর থেকে বের হলাম। গন্তব্য চট্টগ্রাম। আমি তখন আগমন নামক একটি পাক্ষিক ম্যাগাজিন সম্পাদনা ও প্রকাশক হিসেবে কর্মরত। প্রত্যেক মাসে চট্টগ্রাম যেতাম পত্রিকার বিল সংগ্রহ করার জন্য। চট্টগ্রামে পত্রিকা বিক্রি করতেন দুজন ব্যক্তি। একজন মোঃ ইসহাক এবং অন্যজন রাধারমন সেন। সকালে বাসে উঠলে দুপুর একটা নাগাদ তাদের কাছে পৌঁছাতাম। এরই মাঝে ঢাকা থেকে দৈনিক পত্রিকাগুলো তাদের কাছে পৌছে যেত এবং হকারদের কাছে সে পত্রিকা তারা বণ্টন করে দিতেন। আমি গেলে তারা আমার পত্রিকার হিসাব করে বিল পরিশোধ করতেন।সেদিনও রওয়ানা হয়েছি। সীতাকুণ্ডু পৌঁছানোর পর বাস থেমে গেল। চট্টগ্রাম যাওয়া যাবে না। প্রেসিডেন্ট জিয়াকে হত্যা করা হয়েছে। কিছু উচ্ছৃঙ্খল সেনারা তাঁকে সার্কিট হাউজে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করেছে। আমরা যারা বাসের যাত্রী সবাই কেমন যেন একটা মৃত্যুপুরীতে ঢুকে গেলাম। অনেকক্ষণ কেউ কোনো কথা বলতে পারলাম না। মনে হলো আমরা নিজেরাই এখন মৃত। ১ ঘণ্টা সেখানে অপেক্ষার পর বাস আবার ছাড়ল। চট্টগ্রাম পৌঁছলাম বেলা ২টায়। আমাদের এজেন্টরা আমাকে দেখে হতভম্ব। তাদের উৎসুক প্রশ্ন কী করে এলেন। আমি জবাবে বললাম ঢাকা থেকে আমরা কোনো কিছুই জানতে পারিনি। তারা আমার হিসাব বুঝিয়ে দিল, বাসস্ট্যান্ডে এসে শুধু সেনাবাহিনীর টহল গাড়ি ছাড়া কোনো গাড়ি নেই। কী করে ঢাকা পৌছাব। এজেন্টদের লোকজনও যার যার মতো বাড়ি চলে গেছে। কোনো হোটেলে সিট পেলাম না। অবশেষে শহর থেকে অনেক দূরে দেশ গার্মেন্টস-এ আমার এক আত্মীয়ের কাছে গেলাম। সেখানে এক রাত থেকে পরদিন আবার চট্টগ্রাম এলাম। শুভপুর ব্রিজ পর্যন্ত বাস চলে, বাসের লোক বলল ব্রিজটি পায়ে হেঁটে পার হয়ে আবার ঢাকাগামী বাস পাওয়া যাবে।আরো অনেকের সাথে আমিও বাসে উঠলাম। শুভপুর ব্রিজে সেনাবাহিনীর লোকেরা পাহারা দিচ্ছে। তাদের তল্লাশি শেষে ব্রিজের ওপারে পৌঁছে বাস পেলাম। অনেক কষ্টে ঢাকা পৌঁছলাম। বাসায় কান্নাকাটির অবসান হলো।তথ্যটি এজন্য উপস্থাপন করলাম যে, সেদিনই ঠিক করেছিলাম শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াকে নিয়ে একটি বই লিখব। তারই ধারাবাহিকতায় গ্রন্থটি রচনা এবং প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করা।



Reviews
There are no reviews yet.