Description
আমি শিল্পী। মানসচক্ষে দেখতে পাই সব, ঐ ধোঁয়ার মধ্যে। হুগো বালজাক যখন পড়েছি, তখন আর নিজের চোখে প্যারিস দেখার দরকার হবে না। তুমি আমাকে বলো, আমি হুবহু ল্যাটিন কোয়ার্টারের ছবি এঁকে দিচ্ছি।
এই কথাগুলো অথবা এই মনোভঙ্গিকে নিঙড়িয়ে নির্যাস করে গদ্যের বদলে কবিতার ছন্দে বলতে বলা হোতো অবনীন্দ্রনাথকে, কী উত্তর দিতেন তিনি তা লিখে গেছেন জীবনানন্দ।
“তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও—আমি এই বাংলার পারে
রয়ে যাব”;
আশ্চর্য! একজন শিল্পীর মনের খবর হুবহু আরেকজন কবির কলমে। তাহলে কী মনে গভীরতম মহলে মিল ছিল এঁদের দুজনের? কিন্তু সে অনুসন্ধানের প্রথম পর্বে মিলের চেয়ে অমিলটাই চোখের সামনে খাড়া হয়ে ওঠে স্তূপাকারে। দুটো ভিন্ন যুগের মানুষ এরা দুজন। একজনের বিকাশ অভিজাত পরিবারের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে। আরেকজন বড় হয়েছেন সাম্রাজ্যবাদী শাসনের মধ্যপর্বে মধ্যবিত্ত চেতনার সবচেয়ে সংঘর্ষময় পটভূমিকায়। একজনের সৃষ্টির শুরু ফলের বোঁটাকে মনে রেখে, ঐতিহ্যকে অস্বীকার না করেও নতুন ঐতিহ্য রচনার তপস্যায় মেতে। একজন য়ুরোপীয় চিত্রকলার স্বাদ নিয়েছেন দূর থেকে গন্ধে-ঘ্রাণে, জিভের ছোঁয়ায় নয়। আরেকজন য়ুরোপীয় সাহিত্যের সর্বাধুনিক স্রোতে স্নান করেছেন সাঁতার কেটে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের কামান-বিমান যখন বিশ্বের যাবতীয় প্রাচীন মূল্যবোধের দেয়ালকে দিয়েছে ঝাঁঝরা করে, একজনের সৃষ্টির কাজ তখন প্রায় সারা হওয়ার মুখে। আর অন্যজনের সূত্রপাত সেই বিশ্বজোড়া ভস্মরাশির দিকে তাকিয়ে। একজন ঊনবিংশ শতাব্দীর নবজাগরণের প্রত্যক্ষ উত্তরাধিকারী। আরেকজন বিংশ শতাব্দীর নবজাগ্রত সমাজ বিপ্লবের প্রত্যক্ষদর্শী।
Reviews
There are no reviews yet.