Bahariy

1 In Stock

মাজার সংস্কৃতির বহুমাত্রিক প্রভাব

Original price was: ৳ 350.00.Current price is: ৳ 301.00.

Name মাজার সংস্কৃতির বহুমাত্রিক প্রভাব
Category সমাজ, সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষণা ও প্রবন্ধ
Author ড. মো. আশ্রাফুল করিম
Edition ১ম সংস্করণ, ২০২৫
ISBN 9789849967644
No of Page 124
Language বাংলা
Publisher চৈতন্য
Country বাংলাদেশ
Weight 0.27 Kg

1 in stock

Guarantee Safe & Secure Checkout

Description

প্র স ঙ্গ – ক থা
পরিশ্রুত জীবন চেতনাই সংস্কৃতি। একটি জাতির মনন-চেতনা তার সংস্কৃতি দ্বারা পরিচালিত হয়। সংস্কৃতি অবশ্য কোনো অবিমিশ্র ভাবচেতনার সহায়ক নয়। একটি জাতির নানান কর্মকৌশল, চাল-চলন, আচার-ব্যবহার, রীতি-নীতি, ধর্মীয় বিশ্বাস দ্বারা তার সংস্কৃতির নিয়ামকসমূহ নির্ধারণ করে থাকে। জীবন ছাড়া সংস্কৃতির বিকাশ নেই। জীবনচর্যার মধ্যে এমন গুণ, শক্তি ও কর্ম সাধনার প্রয়োজন যা তার অস্তিত্ব ও স্বকীয়তাকে দৃষ্টিগ্রাহ্য ও উপলব্ধিগম্য করে তোলে। মানুষের মননশক্তি, চিন্তাশক্তি ও সৃজনশক্তির গুণেই মানবসংস্কৃতি রূপ লাভ করেছে। আবহাওয়া, জলবায়ু, ভৌগোলিক অবস্থান, শিক্ষা, পেশা প্রভৃতি সংস্কৃতির অবয়বচেতনাকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। বাংলাদেশ চমৎকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও নানা ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর মানুষ হাজার বছর ধরে পাশাপাশি বসবাসের ফলে যে সাংস্কৃতিক ভিত্তিভূমি গড়ে তুলেছে তাতে রয়েছে সমন্বিত ও চলিষ্ণু জীবনচেতনার প্রতিশ্রুতি। এজন্য জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে ও পারলৌকিক ভাবনায় বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ অনেক ক্ষেত্রে প্রায় একই কর্মপ্রণালি নির্দ্বিধায় গ্রহণ করেছে। এর কারণ এ অঞ্চলের অধিকাংশ মুসলিম ধর্মান্তরিত হয়েছে হয় সনাতন ধর্ম থেকে নাহয় বৌদ্ধ ধর্ম থেকে। ইসলাম ধর্ম এ অঞ্চলে আসার পূর্বেও ধর্মান্তরের ধারা অব্যাহত ছিল, তার প্রমাণ গৌতম বুদ্ধের প্রবর্তিত বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা নিয়েছিল এ অঞ্চলের বসবাসকারী সনাতন ধর্মের লোকজনই। তারা ধর্মান্তরিত হয়েছে ঠিকই কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে পৈতৃক কিংবা পূর্বপুরুষদের ধর্মের আচার-ব্যবহার, রীতি-নীতির চর্চা বা অনুশীলন অব্যাহত রেখেছে। দেখা যায় বাঙালি পাপ-পুণ্যের চেয়ে জীবন রহস্য উদ্ঘাটনে অনুসন্ধিৎসু। বলা চলে বাংলার শতকরা পঁচানব্বই ভাগ মানুষ মারফতপন্থি, সেটা সচেতনভাবে কিংবা অবচেতনভাবে। সে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মকে মনে-প্রাণে মানে, শ্রদ্ধা করে, সম্মানও করে; কিন্তু ধর্মের আনুষ্ঠানিকতার ব্যাপারে নিরুৎসাহী। তবে আপদে-বিপদে সে যে সৃষ্টিকর্তার শরণাপন্ন হয় তার বাস্তব উদাহরণ হচ্ছে ধর্মীয় উপাসনালয় অথবা সাধু-পুরুষদের খানকা/দরগা কিংবা তাঁদের সমাধিস্থল বা মাজার।
সে-দিক বিচারে বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় জীবনে মাজার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। সাধারণ মানুষের বিশ্বাস মাজারে শায়িত সাধুপুরুষ পার্থিব জীবনের নানা সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকেন। উপরন্তু সিলেটকে বলা হয় পুণ্যভূমি বা ৩৬০ আউলিয়ার দেশ কিংবা আধ্যাত্মিক রাজধানী। ১৩০৩ খ্রিষ্টাব্দ হজরত শাহজালাল (রহ.) কর্তৃক বিনা রক্তপাতে সিলেট বিজয়কে ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করলে আজ প্রায় আটশত বছর ধরে হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহপরান (রহ.)-সহ ৩৬০ আউলিয়ার সমাধিস্থল অর্থাৎ মাজারকে কেন্দ্র করে এক বিশাল ও বৈচিত্র্যধর্মী সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে যাকে বলা যায় মাজারসংস্কৃতি। যাকে আমরা বলতে পারি বাঙালি সংস্কৃতির একটি প্রাগ্রসর রূপ। কেননা এখানে বিভিন্ন ধর্মের কৃষ্টি কালচারের মিলিত রূপ পরিলক্ষিত। মাজারে যিনি শায়িত আছেন তিনি নিঃসন্দেহে ইসলাম ধর্মের অনুসারী। কিন্তু তাঁকে কেন্দ্র করে তাঁর মাজারে যে সমস্ত কর্মকাণ্ড যুগ যুগ ধরে চলে আসছে তাতে মিশেছে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের রীতি-রেওয়াজ। মাজারে যে সমস্ত কর্মকাণ্ড আচারিত হয়ে আসছে তা মূলত বাংলার লোকধর্ম থেকে উদ্ভূত।
ফিল্ডওয়ার্কভিত্তিক এই গবেষণাকর্মটিতে বাঙালি সংস্কৃতি আর মাজারসংস্কৃতি তুলে ধরে দেখানো হয়েছে মাজারসংস্কৃতি বাঙালি সংস্কৃতির একটি পরিশীলিত ও পরিমার্জিত প্রাগ্রসর রূপ। যা বাংলার সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। বিশেষ করে অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে। সিলেটে মাজার দর্শনার্থীদের সমাগম সারা বছরই লেগে থাকে। মাজারের উরসের সময়ে দর্শনার্থীদের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। যার ফলে সিলেটের অর্থনীতিতে তাদের অংশগ্রহণ উল্লেখ করার মতো। এতে করে সিলেটের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হলেও সাময়িক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মাজারভক্তরা। আজকের মাজারসংস্কৃতি রূপে আমরা যাকে অবহিত করছি তা একদিনে গড়ে ওঠেনি, কালের পরিক্রমায় আজকের রূপ পরিগ্রহণ করেছে। এই মাজারসংস্কৃতি মূল ইসলাম ধর্মে না থাকলেও বাংলার লৌকিক ধর্মে এর শিকড় বহুদূর বিস্তৃত। সুপ্রাচীন কাল থেকেই বাঙালি জাতি কোনো কেতাবি ধর্মকেই শ্রদ্ধার সঙ্গে মেনে নেয়নি; তাই দেখা যায় বৈদিক ধর্ম এদেশে কখনোই পরিপূর্ণভাবে গৃহীত হয়নি, বরং লৌকিক ধর্মকেই বাঙালি চিরকাল মর্যাদা দিয়েছে। সুদীর্ঘ কয়েক শতক বৌদ্ধ শাসনে বাংলা শাসিত হলেও বৌদ্ধধর্মের সারাৎসার সে হয়তো গ্রহণ করেছে। কিন্তু আচারতান্ত্রিকতার ও পরিপূর্ণ নিষ্ঠা হয়তো বাঙালির কোনো কালেই ছিল না। ত্রয়োদশ শতকের সূচনায় ইসলামের আবির্ভাব এবং তারপর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ইসলাম বিচিত্রভাবে বাঙালির মন ও মননে পরিব্যাপ্ত হয়ে আছে কেবল তাই নয়, বরং বাঙালি জাতির মধ্যে মুসলমান এখন সংখ্যাগরিষ্ঠতার পরিচয়; কিন্তু তবু একথা বলা চলে না যে ইসলামের পরিপূর্ণ সংজ্ঞায় যে জীবনযাপন পদ্ধতির কথা বর্ণিত আছে বাঙালি মুসলমানের প্রবণতা সেদিকে থেকে পরিপূর্ণ। তাই বাংলার লৌকিক ইসলামে মাজারকে দেখা হয় ধর্মীয় জ্ঞানে। এর ফলে মাজার সমাজজীবনের প্রতিটি ধাপে অর্থাৎ সামাজিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক প্রভৃতি ক্ষেত্র প্রভাব বিস্তার করে চলেছে।

Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “মাজার সংস্কৃতির বহুমাত্রিক প্রভাব”

Your email address will not be published. Required fields are marked *