Description
মানু্ষের জীবনে এমন মুহূর্ত আসে, যখন সত্যকে পাওয়ার তীব্র দহনে সে জ্বলেপুড়ে যায়। অস্থির ও উত্তাল হয়ে ওঠে। কিন্তু ভোগের লালসা, আলস্যের আক্রমণ ও পরিশ্রমের শঙ্কায় সেই দহন সে ধীরে স্তিমিত করে ফেলে—নানান প্রবোধ দিয়ে, জীবনব্যস্ততায় নিজেকে ভুলিয়ে রেখে, অসহ্য নির্জীবতায়।
ইমাম গাজালির জীবনেও এসেছিল চূড়ান্ত সত্যের তরে এমন এক সুতীব্র প্রহর। কিন্তু তিনি ছিলেন অন্য ধাঁচের মানুষ। সত্যের আকুলতা তাঁকে শান্ত হয়ে বসে থাকতে দেয়নি। সন্তান হারিয়ে ফেলা মায়ের মতো হন্যে হয়ে ঘুরেছেন পথ-প্রান্তরে, জ্ঞানের অলিতেগলিতে। চষে বেড়িয়েছেন চিন্তার প্রতিটি ভাঁজ। গিয়েছেন দার্শনিকদের গম্ভীর মজলিসে, বিজ্ঞানের বিস্মিত আঙিনায়, বাতেনিদের গোপন ডেরায়, সুফিদের নীরব খানকায়। কী দুঃসহ সেই সফর।
একসময় পথহারা নাবিক খুঁজে পেল তার কাঙ্ক্ষিত বন্দর। কী সবুজ সুন্দর উদ্যান সেখানে। বুক ভরা আনন্দ ও স্বস্তি নিয়ে থিতু হলেন শ্যামল সে দ্বীপে, যেখানে পাখিরা ওড়ে, আকাশপাড়ে উঁকি দেওয়া সূর্যটা ছড়িয়ে দেয় কোমল সোনা রোদ, মন্থর হিমেল হাওয়ায় জুড়িয়ে যায় হৃদয়। কোন সে বন্দর?
.
সাম্প্রতিক সময়ের তরুণ লেখকদের অভিযাত্রায় সাবের চৌধুরী স্বতন্ত্র ও স্বকীয় পরিচয়ে হাজির করেছেন নিজেকে। তার গদ্য ও অবলোকন ভিন্নতর। রচনার বৈশিষ্ট্য ও উপস্থাপনার প্যাটার্ন চুম্বকীয়। লেখক মহলে এই নামটি সুবিদিত। ব্যক্তিত্বের ঋজুতা, পরিশীলিত রুচিবোধ, কোমল মেজাজ, শালীন তবিয়ত ও সান্নিধ্যের সৌরভ তাকে দিয়েছে বাড়তি সৌন্দর্য। তার সামগ্রিক লিখনী ও কর্মপ্রয়াসে দেখা মেলে ইলম ও ফিকরের—জ্ঞান ও চৈতন্যের দ্যোতি। একজন ভালো শিক্ষকও তিনি। শিক্ষা ও পাঠদান নিয়ে তার নিষ্ঠাপূর্ণ অভিনিবেশ দৃষ্টি কাড়ে আমাদের।
সাবের চৌধুরী এ সময়ের গুণী লেখক, কথাসাহিত্যিক। করছেন অনুবাদ, সম্পাদনাও। অপরূপ শব্দমন্ত্র, শ্রীময় বাক্য এবং নান্দনিক উপমা-উৎপ্রেক্ষায় গদ্যের যে মায়াবী প্রাসাদ নির্মাণ করেন তাতে বিস্মিত না হয়ে উপায় থাকে না। ভাষায় রচিত বিধায় এই প্রাসাদের রং চটে না, খসে পড়ে না পলেস্তারা। তাই সমকালে অনায়াসে ভবিষ্যদ্বাণী করা যায়, পাঠকের হৃদয়ে প্রিয় লেখকের অভিধায় প্রভাস্বর হয়ে থাকবেন এক সুদীর্ঘকাল।
ইতিহাস কি তার জন্য রেখে দেবে বাংলা কথাসাহিত্যের একটি গৌরবময় আসন?
Reviews
There are no reviews yet.