Description
আলো ফুরনোর সাথে তাল মিলিয়ে পৃথিবী ক্রমশ স্তব্ধ হয়ে আসে। ৪৫৪ কোটি বছরের পুরনো এই ব্যস্ত, কোলাহলমুখর এই গ্রহের বুকজুড়ে নেমে আসে নিস্তব্ধতার আবরণ। জনশূন্য উদ্যানে ভেসে বেড়ায় বাতাসের হু হু ধ্বনি, দূর থেকে ভেসে আসে বেওয়ারিশ কুকুরের হাহাকারমিশ্রিত ডাক। বাতাসের ডানায় ভর করে ভেসে আসা ট্রেনের হুইসেলও আলোর অনুপস্থিতিতে রহস্যময়, অপার্থিব বলে মনে হয়। মনে হয় যেন পরিচিত পৃথিবীর রূপ বদলে এক অদৃশ্য জগতের দ্বার খুলে গেছে।সৃষ্টির আদিকাল থেকেই এই অন্ধকার মানুষের মনে অস্বস্তি জাগিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, ভয়ই হচ্ছে অন্ধকারের আসল প্রতীক। ভয়ের সাথে আমাদের সম্পর্কটা প্রাচীন; মানুষ যখন প্রথম আগুন আবিষ্কার করেছিল, তখনই সে শিখেছিল আলো মানে নিরাপত্তা, আর অন্ধকার মানে অজানার সঙ্গে লড়াই। সেই অজানার রূপকেই আমরা আজ ডাকি নিশুতি নামে।‘নিশুতি’ সিরিজের যাত্রা শুরু হয়েছিল এক ভিন্ন অভিপ্রায় থেকে। রাতের আঁধার, নিস্তব্ধতার আড়ালে যে অচেনা সুর লুকিয়ে থাকে, যে আতঙ্ক নিঃশব্দে ছায়ার ভেতর দিয়ে এগিয়ে আসে- সেই ভয়কে গল্পের ভাষায় প্রকাশ করাই ছিল এর উদ্দেশ্য। ভয় মানেই শুধু আতঙ্ক নয়; ভয়ের সাথে মিশে থাকে বিস্ময়, অচিন্তনীয় রহস্য, আর এক অদ্ভুত মানবিক আবেগ। সেই রহস্য-রোমাঞ্চে বুদ হতে ভালোবাসেন বলেই হয়তো পাঠকবৃন্দ শুরু থেকেই এই সিরিজের প্রতি এক গভীর আকর্ষণ অনুভব করেছেন।আজ সেই যাত্রা সপ্তম বর্ষে এসে পৌঁছেছে। সাত সংখ্যাটির ভেতরেই যেন এক অচেনা জাদু লুকিয়ে আছে—সাত আকাশ, সাত সমুদ্র, সাত সুরের মূর্ছনা, সাত রঙের ধনুক। রহস্যময় এই সাতের ভেতর লুকিয়ে থাকা বিস্ময়কেই আমরা উদযাপন করেছি ‘নিশুতি ৭’-এ। এই সংকলন শুধুমাত্র রহস্য-রোমাঞ্চ-অলৌকিক গল্পের ধারাবাহিকতা নয়, বরং পাঠ-পরম্পরার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন।‘নিশুতি ৭’ সমৃদ্ধ হয়েছে তরুণ, নবীন লেখকদের সৃজনশীলতায়। অনেকেই তাঁদের প্রথম কলমের আঁচড় বসিয়েছেন এই সংকলনের পাতায়, আবার অনেকে নিরীক্ষাধর্মী গল্পের মাধ্যমে ভয়ের সাহিত্যকে নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করেছেন। এই বহুমাত্রিকতা আমাদের উৎসাহিত করে প্রতিনিয়ত।আমরা দৃঢ় কণ্ঠে বলতে চাই, ‘নিশুতি’ নিছক কোনো গল্পসংকলন নয়। এটি এমন এক মুক্ত দ্বার, যা লেখক-পাঠক উভয়কেই কল্পনার রাজ্যে অবাধ বিচরণের সুযোগ করে দেয়। এই প্ল্যাটফর্মে পাঠক ভয়ের গল্পের ভেতর দিয়ে যেমন আতঙ্ক অনুভব করেন, তেমনি খুঁজে পান শিহরণমিশ্রিত আনন্দ। শিরদাঁড়ায় নামতে থাকা শীতল আবহ আর ভয়ের নেশার এই দ্বন্দ্বই বারবার পাঠককে টেনে আনে নিশুতির পাতায়।আমাদের এই দীর্ঘ পথচলায় সহযোগী হিসেবে পাশে থাকার জন্য বিশেষ ধন্যবাদ জানাই বইকথা এক্সপ্রেস-কে। গল্প সংগ্রহের কাজে তাঁদের অবদান অনন্যসাধারণ। শুধু গল্প সংগ্রহ নয়, নতুন লেখকদের অনুপ্রাণিত করতেও এই প্ল্যাটফর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।‘নিশুতি ৭’ হাতে তুলে নিলে পাঠক আবারও সেই দ্বন্দ্বের মুখোমুখি হবেন- ভয় না কি আনন্দ? আতঙ্ক না কি বিস্ময়? এই মিশ্র অভিজ্ঞতাই মানুষের কৌতূহলকে জাগিয়ে রাখে, পাঠকের মনে নতুন প্রশ্ন জন্ম দেয়। আমাদের বিশ্বাস, এই সংকলন সেই কৌতূহলকে আরও সমৃদ্ধ করবে।আমি কৃতজ্ঞ প্রতিটি লেখকের প্রতি, যাঁরা তাঁদের কল্পনার ভুবনকে এই সংকলনের পাতায় জীবন্ত করে তুলেছেন। কৃতজ্ঞ আমাদের পাঠকদের প্রতিও, যাঁদের নিরন্তর ভালোবাসা, আগ্রহ আর প্রত্যাশা আমাদের পথচলাকে অর্থবহ করেছে।ভয় আর রহস্যকে শব্দে রূপ দেওয়ার এই যাত্রা চলতে থাকুক। নিশুতি হোক আমাদের অন্ধকার থেকে আলো খোঁজার এক অন্তহীন অনুসন্ধান।— ওয়াসি আহমেদ





Reviews
There are no reviews yet.