Description
সে বৃদ্ধ হতে পারে না, কারণ সে কখনো তরুণ ছিল না; এক অর্থে সে মৃত্যুবরণ করতে পারে না, কারণ সে কখনো বাঁচে নি; এক অর্থে সে বাঁচতে পারে না, কারণ ইতিমধ্যেই সে মৃত। আমি দার্শনিক নই, তত্ত্বজিজ্ঞাসু মাত্র। কোনো দার্শনিককে পুরোপুরি মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার করে পাঠকদের সামনে যে উপস্থিত করব সে ক্ষমতাও আমার নেই। আমার উদ্দেশ্য খুব সামান্য : সাধারণ পাঠক, যারা দর্শনশাস্ত্রে সুপণ্ডিত নন, তারা যেন বিংশ শতাব্দীর সবচাইতে উল্লেখযোগ্য দর্শন ‘অস্তিত্ববাদের স্রষ্টা সোরেন কিয়ের্কেগার্ড-এর চিন্তাধারাকে নিজেদের জীবনবোধের সঙ্গে মিলিয়ে নিজ-অবস্থানকে স্পষ্ট প্রত্যক্ষ করতে পারেন সেদিকে প্রণোদিত করা। এই বইয়ের মূল প্রতিপাদ্য যেহেতু অস্তিত্ববাদ তাই এখানে আর সে প্রসঙ্গে না গিয়ে কেন আমি অন্য অস্তিত্ববাদীদের বাদ দিয়ে বিষয়বস্তু হিসেবে সোরেন কিয়ের্কেগার্ডকে বেছে নিয়েছি সেই বৃত্তান্তে আসা যাক। বহুদিন থেকেই সার্জের উপন্যাস-নাটকগুলোর প্রতি দুর্বার আকর্ষণ বোধ করি আমি। বহুদিন থেকে শখ ছিল সার্ত এবং তার অস্তিত্ববাদ নিয়ে একটা বেশ গুরুগম্ভীর গ্রন্থ রচনা করব। যথাসময়ে বইপত্র যোগাড় করে সে কাজ শুরুও করি, কিন্তু কিছুদিন পরই মনে হল, না, ব্যাপারটা ঠিক হচ্ছে না। অস্তিত্ববাদের গভীর থেকে গভীরতর দিকগুলোর সঙ্গে পরিচিত হতে হতে মনে হল অস্তিত্ববাদীদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে মৌলিক, ‘মহত্তম অস্তিত্ববাদী’, মধ্য-উনবিংশ শতাব্দীর সেই বিষন্ন ও উদ্বেগাকুল দিনেমার যুবক সোরেন কিয়ের্কেগার্ড যে দেড়শ বছর পরও আমাদের কাছে প্রায় অচেনা রয়ে যাচ্ছেন সেটা সমীচীন হচ্ছে না। খুব ঘনিষ্ঠভাবে না হলেও সার্ত এবং আর দু-একজন বিখ্যাত অস্তিত্ববাদীকে আমরা মোটামুটি চিনি এবং ভবিষ্যতে তাদের জানার আরও সুযোগ ঘটবে, কিন্তু তার আগে বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের সঙ্গে সোরেনের পরিচয়টা আরও নিবিড় হওয়া প্রয়োজন; আর তখনই এই বইয়ের কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু আমাদের মতো দেশে সিদ্ধান্ত নিলেই কাজ শুরু করা যায় না। সচেতন। পাঠক মাত্রই জানেন এখানে কিয়ের্কেগার্ডের এবং কিয়ের্কেগার্ড সম্পর্কিত কোনো বই। খুঁজে বের করা কত কঠিন। যাই হোক যাদের সাহায্যে এই সমস্যা কিছুটা হলেও ওতরানো গেল, কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে তাদের ঋণ শোধ করার একটা ক্ষীণ চেষ্টা অন্তত করা যাক।
Reviews
There are no reviews yet.