Description
৭১ সালের ২৫ মার্চের সেই ভয়াল কালরাতের বিভীষিকার কথা। আমি ২৪ মার্চ হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১ নম্বর কেবিনে ভর্তি হই। ঐ একই সময়ে আমার শ্রদ্ধেয় শাশুড়ি ও আমার ভাইয়ের ফুফু শাশুড়িও রোগী হিসেবে আগে থেকেই হাসপাতালে ছিলেন। এক সাথে এই তিন রোগী দেখাশোনার দায়িত্ব নিলেন ডা. আজহার। ২৫ মার্চের রাতে তিনি বাসায় না ফিরে আমার কেবিনেই থেকে গেলেন।
রাত ১০টার দিকে কর্তব্যরত সিস্টার আমাকে প্যাথেডিন ইনজেকশন দিয়ে চলে যাওয়ার পরপরই আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম। ডাক্তার কেবিন সংলগ্ন বারান্দায় টেবিলের ওপর ঘুমাতে গেলেন। ডাক্তার আজহার তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের শল্য বিভাগে সহকারী সার্জন হিসেবে চাকরিরত। তাই আমি ভর্তি হওয়ার দিন থেকে তিনি কাজের ফাঁকে ফাঁকে কেবিনে এসে আমাকে দেখে যেতেন। ২৫ মার্চ বেলা ১১টার দিকে ডা. আজহার হাসপাতাল ক্যান্টিন থেকে কাবাব ও শিঙ্গাড়া কিনে আমার কেবিনে এলেন, ঐ সময়ে আমার বড় বোন মিসেস শাহাবুদ্দীনও এসেছিলেন।
খাবারগুলো বোনের হাতে দিয়ে এবং কিছু নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেতে শুরু করলেন আজহার, তখন আমি শুয়ে, চেয়ে তাকে দেখছিলাম, সাদা অ্যাপ্রোন ও কালো প্যান্টে ওঁকে সেদিন আমার চোখে কেন যেন খুব ভালো লাগছিল। খেতে খেতে তিনি আমার বোনকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘আপা, আজকে কিছু একটা হতে পারে, দেশের পরিস্থিতি খুব খারাপের দিকে যাচ্ছে, যে কোনো মুহূর্তে কারফিউ হয়ে যেতে পারে। ১৯ নম্বর ও ২০ নম্বর ওয়ার্ড খালি করার হুকুম হয়েছে।’ আমি সাথে সাথে আতঙ্কিত হয়ে কী হয়েছে জিগ্যেস করাতে তিনি ‘ও কিছু না, অফিসে অনেক কাজ আছে’ বলে তাড়াতাড়ি চলে গেলেন। বিয়ের পর থেকেই ডাক্তারকে দেখতাম এসব রাজনৈতিক ব্যাপারে খুব আগ্রহ দেখাতে, প্রায় সময়ই নানা বিষয়ে গভীর আলোচনা করতেন অন্যদের সাথে।
Reviews
There are no reviews yet.