Description
আধুনিককালে, বহির্বিশ্বে বাঙালির যাত্রা শুরু হয়েছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পাল তোলা জাহাজে করে লস্কর নামক নাবিকদের কর্মসূত্রে, তাও বঙ্গদেশে কোম্পানিটির দেওয়ানি লাভের শতাধিক বছর আগে থেকে। বাঙালি হিন্দুর কালাপানি (ভারত সাগর) পাড়ি দেয়াতে ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা থাকায় লস্করদের প্রায় সকলেই ছিলেন বাঙালি মুসলমান। আবার, ঊনিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব থেকে বাঙালি শিক্ষিত ও ধনী (হিন্দু) ভদ্রলোকেরাও ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে- কেউ কেউ ভ্রমণের উদ্দেশ্যে তবে বেশির ভাগই বিদ্যার সন্ধানে– বিলাতে আসতে শুরু করেন। কিন্তু দেশে ফেরার পরে সমাজপতিদের বিচারে তাঁদের কঠোর দণ্ড ভোগ করতে হত। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরও রেহাই পাননি। ঊনিশ শতকের শেষ দিকে এসে ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা অনেকটা শিথিল হলে পরে উচ্চশিক্ষিতদের মাধ্যমেই বিলাতে বাঙালি বসতি স্থাপনের সূচনা হয়। কারণ, লস্করেরা বিলাতে আগে এলেও, এদেশে বসবাস করা নয় বরং স্বদেশে ফেরাটাই ছিল তাঁদের লক্ষ্য। তাঁদের বসতি স্থাপন বিচ্ছিন্নভাবে শুরু হয়ে, বিশ শতকের ৬ষ্ঠ দশক থেকে একটা ধারায় পরিণত হতে থাকে এবং ব্যাপকতা লাভ করে ১৯৭৫ সালের পরে।অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এই বাঙালির উত্তরসূরিরা আজ ব্রিটিশ-বাঙালি হয়েছে। তারা বিলাতে মূলধারার শিক্ষা, সাহিত্য, রাজনীতি ও প্রশাসন, ব্যবসা-বাণিজ্য, সমাজ-উন্নয়ন ইত্যাদির পাশাপাশি বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চা ও পৃষ্ঠপোষকতা, সংবাদপত্র প্রকাশনা ও সাংবাদিকতা মাধ্যমে নিজেদের নিয়ে গেছেন এক নতুন উচ্চতায়। এই ব্রিটিশ বাঙালির সাফল্যগাথা বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে কমবেশি সবার জানা থাকলেও, এঁদের পূর্বসূরিদের প্রায় সাড়ে চারশ বছরের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় এখনো অনেকটা অনালোচিত ও বিস্মিতপ্রায়। ফারুক আহমদ বিগত প্রায় তিন দশক থেকে বিলাতের বাঙালিদের ওপর গবেষণা করে আসছেন। এই সমাজ সচেতন লেখক-গবেষক এই গ্রন্থটি রচনা করেছেন বিলাতের বাঙালির অভিবাসনের অনালোচিত ও বিস্মৃত-প্রায় চারশ বছরের ইতিহাস নিয়ে। তিনি আকর সূত্রে গিয়েছেন, সেখান থেকে এ-যাবৎ-অজানা রোমাঞ্চকর সমস্ত কাহিনি বের করে এ গ্রন্থে মলাটবন্দি করেছেন। বইটি শুধু ইতিহাসের বিদগ্ধ পাঠককেই নয়, সাধারণ পাঠককে যেমন রোমাঞ্চিত করবে, তেমনি বিলাতে বেড়ে ওঠা প্রজন্মকেও দেবে শিকড়ের সন্ধান।





Reviews
There are no reviews yet.