Description
“বলেছি বলছি বলব”বইটির প্রথম ফ্লাপের কিছু কথা :
সচরাচর নেতার ভূমিকা নির্ণয়ে সর্বাগ্রে ভাষণদানরত ব্যক্তিত্বের ছবিই চোখে ভাসে। দেশের রাজনীতিতে তেমন সংযােগ সত্ত্বেও ১৯৬৬-তে শাহ মােয়াজ্জেম হােসেনের একটি আত্মগত জিজ্ঞাসাই অক্ষরের মাত্রায় বিন্যাস পায়। অতীতে দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে মুসলিম-অধ্যুষিত পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা হলেও পূর্বাংশের অধিবাসী ছিল শােষিত। আর প্রতিরােধে আগে আগে যে ভাষাটা চাই! ওদিকে বাঙালির বুলি থামাতে স্বৈরশাসক হত্যাযজ্ঞই চালায়। পরিণতিতে ‘৫২-র ভাষা আন্দোলন পাই। তাতে ‘স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায় রে’র নিভৃত তাগাদায় সেদিনের নবম শ্রেণির ছাত্র শাহ মােয়াজ্জেম হােসেন ছিলেন সােচ্চার। ওই দ্রোহ অপরাধে তাঁকে প্রথম যেতে হল জেলে। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরে তিন তিন বার সভাপতি নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক বঞ্চনার রাহুগ্রাসে নিপতিত বাঙালির বহু গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শাহ মােয়াজ্জেম হােসেন তখন অগ্রনায়ক হয়ে উঠেছিলেন। তারই ক্রিয়ায় ভীত শাসকচক্র নেতাকে বারেবারেই জেলে পাঠায়। সময়ের ঢেউ ভাঙার ওই নির্দয় প্রহরে ষড়যন্ত্রের অতল পেতে যন্ত্রণাক্ত লেখক কলমে কলমে অন্য এক তপস্যাই ফলান। সেলের নির্জনতায় সেই উপলব্ধজাত বিষয় পরবর্তীতে তাঁর নিত্য কারাগার’ গ্রন্থটিতে অপূর্ব সারিবদ্ধ রূপ পায়। গুরুত্ব বিবেচনায় রচনাটির মূল্য এবং প্রাসঙ্গিকতা আজও ধার্য আছে।
স্যাৎ-বভের কথা উদ্ধৃত করছি : ‘যতই আমরা জীবনের পথে এগােই, সমাজ সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান বাড়ে, ততই আমরা বুঝতে পারি তিনি কেতখানি নির্ভুল।’ পরিধির ওই প্রাকৃত-চারণে ১৯৭১-এ ওঠে মুক্তিযুদ্ধের ধ্বনি। শাহ মােয়াজ্জেম হােসেন তখন ছিলেন মুজিবনগরের অন্যতম সংগঠক। ফের ভারতীয় পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশনে স্বাধীন বাংলার ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত আর অবশ্যম্ভাবিতার। ব্যাখ্যাই তুলে ধরেন। মননশীল চিন্তা এবং যুক্তিরধারে মথিত নেতার সেই বক্তৃতামালা স্বাধীনতার ইতিহাসে অমূল্য সম্পদ। অবশেষে লাখাে শহীদি ক্ষরণের আর্তিতে বাংলাদেশের অভ্যুদয়। উত্তর পর্বে পৌছে দেশ পুনর্গঠনে নেতার রাজনীতি মানুষের ঘাটে ঘাটেই নিবেদিত হয়েছে। অথচ শাসনের কূটচালে স্বভূমেও তিনি হলেন কারাবাসী। ক্রমে ক্রমে নিকটজনের কাছেও তাঁর ‘জেলবাের্ড’ আখ্যা জোটে। শাহ মােয়াজ্জেম হােসেনের এই কালাকাল প্রায় অর্ধ শতাব্দীরই অধিষ্ঠান। শুধু সময়ের পরিমাপেই নয়, আমাদের রাজনীতিতে নেতার প্রত্যক্ষ-গােচরও বহুতর। ওদিকে জীবনের পথে চলতে গিয়ে নীল বিষও খানিক সঞ্চিত হল। আর সবের উপলব্ধই বলেছি বলছি বলব’র সারােদ্ধার। পাশে পাশে লেখকসুলভ বৃত্তিতে এই রূপায়ণে- ‘৪৭-উত্তর বাঙালির তাবৎ মাস-প্রবণতাটিও তিনি ধরতে পারেন নিরাবেগ স্বচ্ছতায়। ওই গুণের সন্নিবেশে ‘বলেছি বলছি বলব’ শুধু আজকের পাঠক নয়, বাঙালির সত্যছাপ পেতে গ্রন্থটির পাতা ভবিষ্যতেও ওল্টাতে হবে।
Reviews
There are no reviews yet.