Description
সৌম্য সালেক তাঁর প্রথম-কাব্যপুস্তক আত্মখুনের স্কেচ-এর ভেতর দিয়ে একটি চমৎকার সূচনা করেছিলেন। তাই মুগ্ধ-পাঠক হিসেবে লিখেছিলাম: “ঊন-তিরিশ এই কবি, প্রথম কাব্যগ্রন্থেই অনেকখানি ‘প্রৌঢ়ত্ব’ লাভ করেছেন; জীবনের গূঢ়জটিল সৌন্দর্য ও বিবমিষা, সময়ের দ্বৈরথ, পৃথিবীতে মানুষের অর্জন ও অবমাননা, ঘৃণা ও হত্যাব্যবসার চেহারা এ বয়সেই গভীরপাঠ করেছেন। তাই অবলীলায় বলতে পারেন: ‘অবিরাম কেটেছে প্রহর কত অনুভবে জেনে যাই আমি/তবু গানে ও গমনে বুঝি না জীবনে-চাষ করি কার জমি…’ আমাদের জীবন যে আর আমাদের নিজস্ব নয়, জীবনবণিকের হাতে যে আমরা জন্মের আগেই বিক্রি হয়ে গেছি, কী চমৎকার করে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি! তাঁর নামের মতোই এক সৌম্য কবিভাষা আয়ত্ত করেছেন তিনি। কোনো আত্ম-অনুসন্ধানী দার্শনিকের মতোই তাঁরও নিজেকে জানার তপ্ত-তৃষা। তাই তীব্রভাবে বলতে পারেন: ‘নিজেকে আগুন ভাবি-উবে যায় দেহের দ্রবণ/ ও রুমি, আবারও নাচতে চাই, হোক না মুদ্রাপতন।’’
এখন চৌত্রিশ পেরিয়ে, যখন জন্ম হচ্ছে তাঁর পার্কবেঞ্চের কবিতা নামের চতুর্থ কবিতা বই-দেখছি সীমানা ও পরিধির আরো বিস্তৃতি। তাই তিনি বলতে পারেন: ‘লাখ লাখ বছরে আর কোনো পরামুখ আর কোনো পত্র-কোরক সৃজিত হলো না মানুষের! মানুষ ঘুমাল-জাগল, সঙ্গমে রত হলো, জন্ম নিল এবং পৃথিবীর ব্যূহ-জটা ভেঙে জড়ো হলো পুরনো ঘূর্ণিতে!’ সত্যিই তো, এই ভয়াল করোনা-লাঞ্ছনার পরও মানবজাতি কি আরো একটু ‘মানুষ’ হতে পারতো না! কিন্তু তা আর হলো কই?
তবু নিয়তির মতো কবিকে তো কথা কইতে ও ক্রন্দন করতে হয়: ‘জীবনের আরও যত অপচয় আছে/ তার সাথে গভীর মিতালী করে/ তারছেঁড়া গান করে আমার কবিতা!’
স্বপ্নের পার্কবেঞ্চে বসে কবি তাই শুনিয়ে চলেন জগৎ ও জননী, জীবন ও যাপন, মোহ ও মৃত্যুর দর্শন-উপলব্ধি। আর ‘মৃদু-সংকোচে সন্ধান’ করেন-‘অভিরূপ; অধিলোক আছে নাকি কোনো নাগরিক পৃথিবীতে’?
-সৈকত হাবিব
কবি
Reviews
There are no reviews yet.