Bahariy

1 In Stock

নিকষ

Original price was: ৳ 320.00.Current price is: ৳ 275.00.

Name নিকষ
Category থ্রিলার
Author সৈয়দ অনির্বাণ
Edition ১ম প্রকাশ, ২০২১
ISBN 9789849482734
No of Page 184
Language বাংলা
Publisher আদী প্রকাশন
Country বাংলাদেশ
Weight 0.34 Kg

1 in stock

Guarantee Safe & Secure Checkout

Description

রাত প্রায় এগারোটার মতো বাজে। উদ্বিগ্ন বোধ করছেন আতাহার আলী চৌধুরী। ছেলে সাদাতের সঙ্গে তার খুব একটা দেখা সাক্ষাৎ হয় না বটে কিন্তু রাতের খাবারটা সাধারণত একসাথে খাওয়ার চেষ্টা করেন। অবশ্য সেটা তিনি বাড়িতে থাকলে আর কী। এমনিতে কাজের চাপে প্রায়ই দেশে বিদেশ ঘুরে বেড়াতে হয় তাকে। তবে বাড়িতে থাকলে রাত দশটা নাগাদ টেবিলে দেখা হয় বাপ বেটার। কথা বার্তা তেমন না হলেও একটু সহাবস্থান, সে-ই বা কম কীসে?
আতাহার সাহেবের জানা আছে যে নয়টার মধ্যে বাড়ি ফেরে সাদাত। ওর জীবন যথেষ্ট রুটিন বাঁধা। সেকারণেই এত দেরী হচ্ছে বলে চিন্তিত বোধ করছেন তিনি। ফোনে কয়েকবার চেষ্টা চালিয়েছেন কিন্তু রিং বাজলেও কেউ রিসিভ করছে না। ইতিকর্তব্য স্থির করে উঠতে পারছেন না আতাহার সাহেব, এমনিতে এগারোটা ঢাকার পক্ষে এমন কিছু রাত নয়, কিন্তু একে বাবার মন, তার ওপর সাদাতের ছক বাঁধা জীবনযাপন – সব মিলে দুশ্চিন্তা তাকে কাবু করে ফেলেছে। কী করা যায় ভাবছেন তিনি। থানায় ফোন করবেন? নাকি হাসপাতালে? নাকি কোন সাংবাদিক বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করবেন – খবরাখবর তো ওদের কাছেই তাড়াতাড়ি যায়।
উৎকণ্ঠা আর উত্তেজনার চোটে চেয়ার ছেড়ে উঠে পায়চারি শুরু করলেন আতাহার সাহেব। দুই হাত পিছমোড়া করে, মাথা নুইয়ে ঘরের এমাথা ওমাথা করছেন আর ভাবছেন। এমন সময় সদর দরজায় সাড়া পাওয়া গেল।
চমকে উঠলেন আতাহার আলী চৌধুরী, তারপর হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে গেলেন। দোরগোড়ায় সাদাতকে দেখে এক হ্রাস স্বস্তি যেন ঘিরে ধরল তাকে, কিন্তু তা ক্ষণিকের জন্য মাত্র। সাদাত ফিরে এসেছে বটে, কিন্তু দেখেই বোঝা যাচ্ছে স্বাভাবিক অবস্থায় নেই ও। কুঁজো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ছেলেটা। বুকের ওপর ঝুলে পড়েছে মাথা। ধীরে কিন্তু ছন্দ বজায় রেখে মাথাটা দোলাচ্ছে ও। যেন কোন গানের সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে, অথচ কানে হেডফোন গোজা নেই। ওর দাঁড়িয়ে থাকার ভঙ্গির মাঝেও অস্বাভাবিক কী যেন আছে, ঠিক ঠাহর করতে পারলেন না আতাহার সাহেব তবে এটুকু বুঝতে পারলেন যে কোন একটা সমস্যা হয়েছে তার ছেলের।
‘কী ব্যাপার, সাদাত? কী হয়েছে তোর?’ বলতে বলতে এগিয়ে গিয়ে ছেলের কাঁধে হাত রাখলেন আতাহার সাহেব। ধীরে, অতি ধীরে মাথা তুলে বাবার চোখের দিকে তাকাল সাদাত। এইবার রীতিমত চমকে উঠলেন আতাহার সাহেব, রক্তজবার মতো টকটকে লাল হয়ে আছে সাদাতের চোখ জোড়া!
গাঁজা খেলে চোখ এমন রঙ ধারণ করে, কিন্তু সাদাতের ওই রকম কোন বদ অভ্যাস যে নেই সে ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত আতাহার সাহেব। তবে কী ওর শরীর খারাপ করেছে? দ্রুত সামনে এগিয়ে ছেলের কপাল স্পর্শ করলেন তিনি। না বাড়তি কোন উত্তাপ তো নেই…
খুবই ধীর গতিতে হাত তুলে আলতো করে বাবার বুক স্পর্শ করল সাদাত। ঈষৎ টলছে ও। হয়ত ভারসাম্য রক্ষার জন্য অবলম্বন দরকার ছেলের, ভেবে আরো একটু কাছে এগিয়ে গেলেন আতাহার সাহেব। পরক্ষণেই ওনার গলা চিঁড়ে বেরিয়ে এল আর্তচিৎকার! আতাহার সাহেবের পরনে ছিল পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি। পাঞ্জাবির সামনের দিকটা খামচে ধরে হ্যাঁচকা টান মেরেছে সাদাত। কাপড়ের সঙ্গে বাবার বুকের বেশ কিছু লোমও ছিঁড়ে নিয়েছে ও! তারপর বিন্দুমাত্র দেরী না করে ঝটকা দিয়ে আতাহার সাহেবকে পাশ কাটিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়েছে।
কুঁজো হয়ে দ্রুত পায়ে কিন্তু টলমল পায়ে এগিয়ে ঘরের মাঝখানে পৌঁছে গেল সাদাত। তারপর কষে একটা লাথি মারল ড্রয়িং রুমের সুদৃশ্য টি-টেবিলে। ঝনঝন করে উঠল টেবিলটা। ছিটকে পড়ল সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা অ্যাশট্রে এবং আরও কয়েকটা শোপিস। কাঁচ ভাঙ্গার তীক্ষ্ণ আওয়াজে ভেঙ্গে খানখান হয়ে গেল রাতের নীরবতা।
ঘটনার আকস্মিকতায় রীতিমত বিহ্বল বোধ হয়ে পড়লেন আতাহার আলী চৌধুরী। বুকের যেখান থেকে লোম ছিঁড়ে নিয়েছে সাদাত জ্বলছে সে জায়গাটা, কিন্তু শারীরিক বেদনার তুলনায় মানসিক আঘাতটা অনেক বেশি কাবু করেছে তাকে। সাদাতের অসংলগ্ন আচরণের হেতু বুঝতে পারছেন না তিনি। এমনকি গাঁজা সেবন করে থাকলেও এতটা পাগলামি করার কথা না ছেলেটার। কিন্তু আতাহার সাহেবের বিস্মিত হওয়ার তখন কেবল শুরু, টেবিলে লাথি মেরেই ক্ষান্ত হলো না সাদাত। ঝটকা দিয়ে মেঝেতে আছড়ে পড়ল ও। হামাগুড়ি আর বুকে হাঁটার মাঝামাঝি একটা অবস্থায় গিয়ে অনেকটা সরীসৃপের মতো ছেঁচড়ে বেড়াতে শুরু করল ঘরের মেঝের ওপর। মুখ দিয়ে জান্তব হিশ্ হিশ্ জাতীয় একটা শব্দ বেরোচ্ছে। এতটাই অপার্থিব, আজব সে শব্দ যে শুনলে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। কোন মানুষের কণ্ঠ থেকে এমন বিজাতীয় আওয়াজ সৃষ্টি হতে পারে বলে ধারণা ছিল না আতাহার সাহেবের। কিন্তু আজকে তারই সন্তানের মুখ দিয়ে এই ভয়াল স্বর বেরিয়ে আসছে!
আতাহার সাহেবের মনে হলো নিশ্চয়ই কোন ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন দেখছেন তিনি। নইলে এমন অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটার কোন কারণ নেই। কিন্তু স্বপ্নের তুলনায় পরিস্থিতিটা অনেক বেশি বাস্তব। হঠাতই ঝটকা দিয়ে লাফিয়ে সোজা হয়ে হয়ে দাঁড়াল সাদাত। তারপর দেয়ালে ঝোলানো একটা অয়েল পেইন্টিং টান মেরে নামিয়ে এনে সজোরে আছাড় মারল।
‘সাদাত!’ রাগ, উৎকণ্ঠা আর বিস্ময় মিলে আতাহার সাহেবের কণ্ঠাটা ভাঙ্গা শোনাল। ‘কী হচ্ছে এসব! কী শুরু করেছ তুমি?’
কোমর স্থির রেখে শুধু কাঁধ আর মাথা মুচড়ে অদ্ভুত ভঙ্গিতে শরীর বাকিয়ে বাবার দিকে তাকাল সাদাত। ওর চোখ থেকে যেন এখনি গড়িয়ে পড়বে তাজা রক্ত – এতটাই লাল হয়ে আছে অক্ষি যুগল। আর দৃষ্টির সে কী তীব্রতা। কী যেন একটা আছে সেখানে – সারা শরীর কেঁপে উঠল আতাহার সাহেবের। এতক্ষণ উদ্বেগ আর দুশ্চিন্তায় ছেয়ে ছিল তার অন্তর, এইবার সেখানে যুক্ত হলো তীব্র, সর্বগ্রাসী ভয়। ছেলের চোখের দিকে তাকিয়ে সরসর করে দাঁড়িয়ে গেল তার ঘাড়ের কাছের চুলগুলো। নিজের অজান্তেই এক পা পিছিয়ে গেলেন তিনি। দরজার চৌকাঠ আঁকড়ে ধরে স্থির হওয়ার চেষ্টা নিলেন। তারপর উঁচু গলায় চেঁচালেন, ‘রহিম, এই রহিম! জলদি আয়!’

Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “নিকষ”

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নিকষ
You're viewing: নিকষ Original price was: ৳ 320.00.Current price is: ৳ 275.00.
Add to cart
Select the fields to be shown. Others will be hidden. Drag and drop to rearrange the order.
  • Image
  • SKU
  • Rating
  • Price
  • Stock
  • Availability
  • Add to cart
  • Description
  • Content
  • Weight
  • Dimensions
  • Additional information
Click outside to hide the comparison bar
Compare
Shopping cart close