Description
‘ হাসপাতাল করিডোরের বেঞ্চে চুপচাপ বসে আছে সুবিমল বড়ুয়া।
অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি ঈশিতাকে ওর বাসায় পাঠাতে পেরেছেন। মেয়েটা থেকে যাওয়ার জন্য খুব অনুনয় বিনয় করছিল। কিন্তু তিনি তার অভিজ্ঞ চোখ আর মন দিয়ে যা দেখতে বা সামলাতে পারবেন, ঈশিতা মোটেও তা পারার জন্য এখনও প্রস্তুত নয়। পুলিশের জেরার মুখে এখনো তো ভালোমতো পড়েনি তারা। এখন তো সবাই কারিতাকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে আছে। ভালো অথবা মন্দ যাহোক কিছু একটা হয়ে গেলেই শুরু হবে অন্য দৌড়। সেই দৌড়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার জন্যও শুরুতেই এত ধকল নেওয়া উচিত হবে না। তাদের এসব রাতজাগা ক্লান্তি আর দুশ্চিন্তার কোনো আলাদা অর্থ থাকবে না পুলিশের কাছে।
কিন্তু তবুও তিনি কেন নিচ্ছেন এত ধকল?
এই প্রশ্নের জবাবটাই সেই তখন থেকে খুঁজে চলেছে সুবিমল বড়ুয়া। কারিতা কি সত্যিই এত গুরুত্বপূর্ণ কেউ ছিল তার কাছে? এতগুলো দিন একসাথে কাজ করলেন যার সাথে, সে নিজের অজান্তেই ‘বিশেষ কেউ’ হয়ে ওঠে। কারিতাও হয়ত হয়ে উঠেছিল। তিনি নিজে কোথাও বাঁধা পড়তে চান না বলেই এখান থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে চলে যেতে চেয়েছিলেন। যুগের দাবি বলে একটা জিনিস থাকে। তিনি প্রাচীনপন্থী একজন মানুষ। একসময় সংগীতের প্রতি অন্যরকম একটা টান ছিল বলেই এই জগত আর এর বাসিন্দাদের মাঝে ঢুকে পড়েছেন। কিন্তু যুগের প্রলয়ঙ্করী দাবি যখন সম্পর্ক আর বিশ্বস্ততার ওপরে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তখন সম্মান বাঁচিয়ে সরে পড়তে পারলেই ভালো হয়। হয়ত তাতে বড় কোনো লোকসানের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
দুবাইফেরত একটা ছটফটে অল্পবয়সী মেয়েকে গড়েপিটে নিতে অনেকখানি সময় বেরিয়ে যাবে এমনটাই মনে হয়েছিল তার কাছে। কারিতার বয়স তখন সবে একুশ কী বাইশ। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আর প্রবল আত্মবিশ্বাসী কারিতার মধ্যে কী জানি একটা ছিল। হয়ত জেদ। অন্যরকম জেদ।
ঐ অন্যরকম জেদের কাছেই বাঁধা পড়ে গিয়েছিল সুবিমল বড়ুয়া। তখন তিনি যথেষ্ট অভিজ্ঞ এই লাইনে। বড় বড় প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের সাথে কাজ করেছেন। আর কারিতা তখন সবে পায়ের নিচে মাটি বানাতে ব্যস্ত একজন। গলায় জোর আছে। সুর তাল লয় ছন্দ সবকিছুই ঠিকঠাক। শুধু কিছুটা ঘষামাজার প্রয়োজন ছিল তখন। সুবিমল বড়ুয়ার কাছে মনে হলো, এই কাজটা তিনি অনায়াসেই করতে পারবেন।
দেখাই যাক না, মেয়েটার এই ঘাড় তেড়িয়ে তাকানো আর আত্মবিশ্বাসী কথার মাঝে আসলেই কোনো এক্স ফ্যাক্টর আছে নাকি পুরোটাই ধাপ্পাবাজি!”
Reviews
There are no reviews yet.