Description
“উপমহাদেশ”বইটির প্রথমের কিছু অংশ: অন্ধকারে হঠাৎ গুলীর শব্দে নৌকাটা দুলে উঠল। যাত্রীরা উবুড় হয়ে পড়ল এ-ওর গায়ের ওপর। নৌকার পেটের ভেতর থেকে ময়লা পানির ঝাপটা এসে আমার মুখটা সম্পূর্ণ ভিজিয়ে দিল। সার্ট ও গেঞ্জির ভেতর ছলছলানাে পানি ঢুকে ঝুলতে লাগল। আর ফোঁটা ফোঁটা চুইয়ে পড়তে লাগল পাটাতনে। ততক্ষণে বুড়াে মাঝি ও তার ছােটো ছেলেটা বৈঠা গুটিয়ে নিয়ে পাটাতনে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়েছে। কে একজন ছিটকে এসে আমাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেছে। কান্না ও শরীরের ছোঁয়াতেই আমার বুঝতে বাকি রইল না, একটা মেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁাঁপাচ্ছে। আমার অস্তিতের সমর্থন পেয়েই কিনা জানি না, মেয়েটার কানা আরও শব্দ করে একট রােদন বা বিলাপের মতাে হয়ে উঠল। আর সাথে সাথেই আখাউড়ার দিক থেকে সারিবাধা পটকা ফাটানাের মতাে গর্জন করে বইতে লাগল গুলীর শব্দ। সীসার বাতাস কেটে চলে যাওয়ার শিস উঠছে। এর মধ্যেই আমাদের গাইড আনিসের বাজখাই গলা শােনা গেল, ‘কে কাদছে? এই হারামজাদি একদম চুপ করে থাক।’ ধমক খেয়ে মেয়েটার ফেঁপানি বিকৃত হযে অবরুদ্ধ গােঙানির মতাে হয়ে উঠল। আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না কি করব। মেয়েটা আমার পিঠের ওপর উবুড় হয়ে আমাকে দুহাতে জাপটে ধরে কাদছে। আনিসের গলা যে এতটা রূঢ় ও দয়ামায়াহীন হয়ে উঠতে পারে একটু আগেও এই নৌকার কেউ আমরা আন্দাজ করতে পারি নি। যদিও আমার সাথে পরিচয় হওয়ার সময়ই আমি আনিসকে সশস্ত্র দেখেছি। দেখেছি চাদরের ভেতরে উঁচু হয়ে আছে এস. এল, আর-এর ঝাফরিকাটা ছােট নল। তার কোমরের বেল্টে সাবধানে ঝুলিয়ে রাখা দুটি হ্যাণ্ড গ্রেনেডও হঠাৎ দেখে ফেলেছিলাম। যেন দুটি বারুদের পাকা ফল নিয়ে আনিস হাঁটছে। কিন্তু আমার কাছে যখন নিজের পরিচয় দিয়ে চাটগাঁ থেকে আগরতলায় পালিয়ে যাওয়া আমার বােন ও ভগ্নীপতির লেখা একটি চিঠি হস্তান্তর করে বলল, “আপনাকে আমিই পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবাে। আগামীকাল ভােরে, রাত থাকতেই রওনা হব। তৈরি হয়ে থাকবেন। কোনাে ভারী বােঝা নেবেন না। আসি তাহলে। আমি এমুহূর্তে দেশ ছেড়ে পালাব কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়েই ছেলেটা কথাগুলাে বলে খামটা আমার হাতে তুলে দিয়ে সন্ধ্যার অন্ধকারে মিলিয়ে গিয়েছিল। তার দাড়িভরা মুখের আকৃতিটা ঠাহর করতে না পারলেও, হাসির মধ্যে এক ধরনের বিশ্বস্ততা দেখে আমি আর কথা বলতে পারি নি।
Reviews
There are no reviews yet.