Description
মানুষের স্বাভাবিক প্রকৃতি হলো, সে স্রষ্টাকে স্বীকৃতি দিবে। এই ফিতরাতের ওপরই তার জন্ম। বেড়ে ওঠায় প্রভাব পড়ে সে কী হবে না হবে। পিতা-মাতা কিংবা পরিবেশ তাকে যে দীক্ষা দিবে, পরিশেষে দীন হিসেবে সে তাই গ্রহণ করে থাকে।
.
মহান রাব্বুল আলামিন এই জগত সৃষ্টি করেছেন এবং এই জগত কেন সৃষ্টি করেছেন তাও বলে দিয়েছেন। তাঁর প্রতি বিশুদ্ধ ইমান আনার আদেশ করা হয়েছে। কীভাবে এবং কোন কোন বিষয়ে ইমান আনতে হবে, তাও স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
.
আজ বিজ্ঞানের উৎকর্ষতা চোখের সামনে। মঙ্গলে বসতি স্থাপনের কথাও যেন স্বাভাবিক। এক সৃষ্টি আরেক সৃষ্টির কাছে পৌঁছার দৃশ্যে পৃথিবী অভিভূত। অথচ স্রষ্টার কাছে পৌঁছানোর ব্যাপারে অজ্ঞ। আল্লাহ জানতেন, মানুষ একটু চেষ্টা করলেই চাঁদে যাওয়ার মতো যোগ্যতা অর্জন করে ফেলবে। এমনসব বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করবে, আপাতদৃষ্টিতে যা অসম্ভব। কিন্তু সে হাজার চেষ্টা করেও বুঝবেনা, সুদের কী কুফল! হারামে কী বিপর্যয়! আল্লাহর আসল পরিচয়। দীন মানার উপকারিতা। জান্নাতে প্রবেশের আমল! জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায়! তাইতো, অজ্ঞ এই মানুষকে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে জ্ঞান দিয়ে সম্মানিত করেছেন। জানিয়েছেন কোনটা কী এবং কীভাবে কী করতে হবে।
.
ইসলামের প্রাণ ছোট্ট একটি কালিমা। মানব জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে এই কালিমার প্রভাব সুস্পষ্ট। আল্লাহ জানিয়েছেন, এই কালিমার বিস্তৃতি কতটুকু। আল্লাহ নিজের পরিচয় দিয়েছেন এই কালিমায়। মহান রব, যাঁর সম্পর্কে আমরা অজ্ঞাত থেকে যেতাম, তিনি তাঁর পরিচয় দিয়েছেন তাঁর বান্দাদের। তিনি কে এবং তাঁর ক্ষমতা কতটুকু। রাসুলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা স্পষ্ট বর্ণনা করে গেছেন। এবং তাঁর মহান সাহাবীগণ (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) যা পুরোপুরি ধারণ করেছেন এবং পরবর্তীদের কাছে হুবহু পৌঁছেছেন।
.
আল আকিদাতুল হাসানাহ বা উত্তম আকিদা হচ্ছে যুগশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলবি রাহিমাহুল্লাহ’র আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকিদার ওপর রচিত নির্ভরযোগ্য একটি রিসালাহ। যেখানে তিনি একজন মুসলিমের সঠিক আকিদা কী হবে – তা বয়ান করেছেন। এই দীনে আকিদার গুরুত্ব কতটুকু – তা আর নতুন করে বলার কিছু নয়। দৃঢ় বিশ্বাস আর আনুগত্যের ওপরই ঠিকে আছে এই দীন। সুতরাং যিনি নিজেকে মুসলিম হিসেবে পরিচয় দেন, পরকালের পথের পথিক মনে করেন, তার তো আল্লাহ, দীন ইসলাম, নবি-রাসুল, পরকাল, সর্বোপরি সঠিক ইমানের ওপর থাকার জন্য যে ধরনের আকিদা-বিশ্বাস থাকা দরকার – তা জানা দরকার। অনেকে না জেনে কিংবা ভুল জেনে সঠিক পথের ওপর আছে মনে করে। অথচ শরীয়াহ হকের যে মানদণ্ড দিয়েছে, তার নিক্তিতে তা পরিত্যাজ্য হিসেবে পরিগণিত হয়। কত ফিরকা শুধুমাত্র আকিদার ভ্রান্তির কারণে বাতিল আখ্যায়িত হয়েছে। দীন হেফাজতের দায়িত্ব যেহেতু আল্লাহ নিয়েছেন, তাই দীন ও দীনের সমঝ তিনি প্রান্তিকতা ও ভুলভ্রান্তি থেকে রক্ষা করেন এবং কিছু নির্বাচিত মানুষের মাঝে ধারণ করান। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতই হলো আল্লাহর মনোনিত, সরল পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত ভারসাম্যপূর্ণ সেই দল। বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকিদা-বিশ্বাস জানতে সহায়তা করবে ইনশাআল্লাহ।
.
গ্রন্থটি মূলত ছোট্ট একটি রিসালাহ। ফর্মাখানেক হবে হয়তো। মুহতারাম আলী হাসান উসামা (হাফিজাহুল্লাহ) প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ যোগ করে গ্রন্থের আকৃতি দিয়ে ফেলেছেন। বড় একটি খিদমত আল্লাহ তাঁর মাধ্যমে নিয়েছেন। আল্লাহ ও দীন সম্পর্কে অনেক মানুষের সঠিক জ্ঞান না থাকায় ইসলামের নামে যে যা বলে, তাই ঠিক মনে করে। আল্লাহর শানে এমন কথাও সে নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করে, যা তাঁর শানের খেলাফ। এসব অজ্ঞতা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। গোমরাহীর দরজার দিকে যারা আহ্বান করে, তাঁদের রুখতে হবে। প্রয়োজন সঠিক জ্ঞান রাখা। বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটি এক্ষেত্রে আকিদার সঠিক জ্ঞান রাখতে অবদান রাখবে ইনশাআল্লাহ।
.
বইটির একটি বিশেষ দিক হলো, এটা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অধিকারী দেওবন্দী ধারার আলোকে রচিত। বর্তমান সময়ে আকাবিরে দেওবন্দের ওপর চরম মিথ্যাচার করা হচ্ছে। মনগড়া কথাবার্তা তাঁদের দিকে নিসবত করে, তাঁদের আকিদা ঠিক নেই – এমন গর্হিত প্রচারণা চালানো হচ্ছে ; যা নিজচোখে দেখা। অথচ এই উপমহাদেশে যদি সত্যিকারের ইসলাম যা সালাফের মানহাজের ওপর প্রতিষ্ঠিত – কোনো গোষ্ঠী ধারণ করে থাকে, তবে দেওবন্দীরা! দেওবন্দী একটি পবিত্র ধারা। যা কিতাব ও সুন্নাহর সঠিক অনুসরণ করে অগ্রসর হচ্ছে। অথচ পবিত্র এই ধারাকে যখন বলা হয়, এখনো আকিদা ঠিক নাই তখন আল্লাহর কাছেই সব অভিযোগ !
.
যাই হোক, বাতিলপন্থীদের জন্য সমুচিত এক জবাব হবে গ্রন্থটি। যারা ইসলামি আকিদার স্পষ্ট জ্ঞান রাখতে চান, তাঁদের জন্য গ্রন্থটি দারুণ এক পাওয়া হবে। তবে একটি বিষয় বলে রাখি, বইটি যথাসাধ্য সহজ রাখার চেষ্টা করা হলেও তুলনামূলকভাবে একটু কঠিন হয়ে গেছে! আল্লাহর সিফাতসহ জটিল কিছু আলোচনা রয়েছে। প্রাথমিক পাঠকদের আশাহত হবার কিছুই নেই ; বরং এসব আলোচনা থাকায় খুশি হওয়া উচিত। এসব বিষয় পোক্তভাবে জানা দরকার। বিভ্রান্তির দ্বার উন্মুক্ত হবে না আশা করা যায়। আল্লাহর ওপর ভরসা করে নিজেই বা কোনো উস্তাদের তত্ত্বাবধানে কিংবা জিজ্ঞাসা করে করে যদি কয়েকটি পৃষ্ঠা পড়া হয় বা সম্ভব হলে পূর্ণাঙ্গ কিতাব – তাহলে পোক্তভাবে আপনার আকিদার ভিত্তি শক্ত হবে এবং ঝরে যাওয়া থেকে রক্ষা করবে ইনশাআল্লাহ। (তবে তাফবিয, ইসবাত, তাবীল ইত্যাদি সম্পর্কে আরো বিশদভাবে জানতে অনুবাদকের ‘ইসলামি আকিদা ও মানহাজ’ বইটি পড়া দরকার!)
.
বইয়ের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় একটি ব্যাপার হলো, কয়েকটি জায়গায় দুইটি ভিন্ন শব্দকে এক শব্দ বা কোথাও শব্দই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে! অবশ্য এতে সৌন্দর্য নষ্ট হওয়া ব্যতীত আর কোনো ক্ষতি হয়েছে বলে আমার মনে হয়নি। দীনি খিদমতে বইটির মাধ্যমে প্রত্যয়ের যাত্রা। আশা করি, সামনে বই প্রকাশে তাঁরা আরো গুরুত্ব দিবে।
Reviews
There are no reviews yet.