Description
প্রসঙ্গ মানুষ জীবনানন্দ
জীবনানন্দ দাশের স্ত্রী লাবণ্য দাশের লেখা বই ‘মানুষ জীবনানন্দ।’বইটিতে রয়েছে জীবনানন্দের সাথে তাঁর বিয়ের সম্পর্ক তৈরি হওয়ার সময় থেকে কবির মৃত্যু পর্যন্ত সময়ের স্মৃতিকথা। স্বামী বা পিতা হিসেবে জীবনানন্দ কেমন ছিল সে সম্পর্কেও তথ্য পাওয়া যায় কবিপত্মীর জবানীতে। জীবনানন্দপ্রেমীদের কাছে জীবনানন্দকে নতুনভাবে জানার একটি সুযোগ তৈরি হবে এই বই পাঠে।
লাবণ্য দাশ
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান ও আধুনিক ধারার কবি জীবনানন্দ দাশের স্ত্রী লাবণ্য দাশ। কবির মৃত্যুর পর কবি জীবনের নানান প্রসঙ্গ নিয়ে কবিপত্মীর রচনা করেন এই বই ‘মানুষ জীবনানন্দ’।
ভূমিকা
রবীন্দ প্রভাব বলয়ের বাইরের প্রধানতম কবি জীবনান্দ দাশ কলকাতায় এক ট্রাম দূর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন 1954 সালে। নিভৃতচারী এই কবি দীর্ঘ দিন ধরে বেকারত্ব ও দারিদ্রের সাথে সংগ্রাম করে মৃত্যুর মাত্র কয়েক বছর আগে পেতে শুরু করেছিলেন খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা । ‘নির্জনতম’ এই কবির যে বিপুল অপ্র্রকাশিত রচনা তাঁর মৃত্যুর-পরবর্তী সময়ে আবিষ্কৃত হয়, তাতে তিনি যে প্রচারবিমুখ তার প্রমাণই মেলে না কেবল, নিজের লেখা নিয়ে তাঁর সংশয় এবং অতৃপ্তি প্রকাশ পায়। তাঁর জীবনের শেষ কয়েক বছর নিয়তি তাঁর দিকে চোখ তুলে তাকিয়েছিল, তিনি পেয়েছিলেনি একটা ভদ্রোচিত জীবিকার সন্ধান, পাঠক ও সম্পাদক মহলে পেয়েছিলেন সমাদর ও স্বীকৃতি। তাঁর বিশাল রচনাসম্ভারের বেশির ভাগই আবিষ্কৃত হয় তাঁর মৃত্যুর পর। সে সব লেখার কোনো কোনটির গুনগত মান নিয়ে সাহিত্য বোদ্ধারা বিতর্ক করতে পারেন। কিন্তু একথা মেনে নিতেই হবে যে, বিপুল রচনা সম্ভাররেখে গেলেও তাঁর জীবদ্দশায় সে সব প্রকাশের কোন ব্যবস্থা হয়নি কিংবা কোনো তাগিদ অনুভব করেননি তিনি। নিজের রচনা সম্পর্কে এই নিস্পৃহতা কিংবা সংকোচ অথবা সংশয় আমাদের বর্তমানের প্রচারমুখী মানসিকতার সাথে একেবারেই বেমানান।
মৃত্যুর মাত্র কয়েক বছর আগে থেকে তাঁর কবিতার মূল্যায়ন শূরু হলেও তাঁর রচনাবলী আবিষ্কারের মতোই মৃত্যু পরবর্তীকালে সত্যিকারভাবে শুরু হয় তাঁর রচনা এবং জীবনের যথাযথ উন্মোচন। সাতচল্লিশের দেশভাগের আগুনে তিনটি দেশের ধর্মীয় সংখ্যা লঘু বাস্তুহারা মানুষ যখন দগ্ধ হচ্ছিল,সেই দুঃসময়ে প্রিয় বরিশাল তথা বাংলাদেশ ছেড়ে , কলেজের শিক্ষতায় ছেদ ঘটিয়ে আরও বহু অমুসলমান পূর্বপাকিস্তানীর মতো কলকাতায় পাড়ি জমিয়েছিলেন জীবনানন্দ। তাঁর কলকাতা বাস ,উদ্বাস্তু জীবনের যন্ত্রণা, বেকারত্বের দুর্বহ জীবনের কথা আজকাল আমাদের অনেকেরই জানা। সেই সময় যে কোন উপায়ে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টায় রত জীবনানন্দ দাশ কবিতা লেখার পাশাপাশি গল্প উপন্যাস লিখে গ্রাসাচ্ছদন করতে চেয়েছিলেন। আমরা জানতে পারি তিনি উপন্যাস লেখার বিষয়ে কিছুটা উপদেশ পাওয়ার জন্য প্রতিভা বসুর সাথে দেখা করেছিলেন। কারণ কবিতা লিখে যে আয় হতো তার চাইতে গল্প উপন্যাসের বাজার দর ছিল অনেক বেশি। সে সময় জীবনানন্দের অর্থোপার্জানের নির্দিষ্ট কোনো উৎস ছিল না। গল্প –উপন্যাস লিখে তিনি সেই উৎস সৃষ্টি করার কথা ভেবেছিলেন। এক পর্যায়ে উপন্যাস প্রকাশের বিষয়ে আলাপ করবার জন্য তিনি ‘দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক সাগরময় ঘোষের সাথেও দেখা করেছিলেন। সে সময় ‘দেশ’ পত্রিকা লেখার জন্য ভালো সম্মানি দিত। ‘দেশ’ সম্পাদক জীবনানন্দের লেখা ছাপতে রাজি থাকলেও তিনি কোন এক অজ্ঞাত কারণে কোন লেখা পাঠননি। তাঁর সেই প্রবল অর্থেকষ্টের সময় তিনি বেশ বিছু গল্প এবং একাধিক উপন্যাস লিখে রাখলেও জীবদ্দশায় সে সব কেন তিনি ছাপতে দেননি সেটাও এক রহস্য।
জীবদ্দশায় জীবনানন্দের প্রকাশিত কাব্যগন্থের সংখ্যা মাত্র সাতটি। মৃত্যুর পরবর্তীকালে তাঁর যাবতীয় রচনার প্রকাশ শুরু হলেও তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘মাল্যবান’ প্রকাশিত হয় তাঁর মৃত্যুর ঊনিশ বছর পর।
ফারুক মঈনউদ্দিন
বনানী,ঢাকা
জানুয়ারী,2012
Reviews
There are no reviews yet.